
সুদূরের পিয়াসী - ভূ-পর্যটক বিমল দে ১ ও ২ খন্ড
সুদূরের পিয়াসী - ভূ-পর্যটক বিমল দে ১ ও ২ খন্ড
Tk. 3050Tk.3390You Save TK. 340 (10%)
Reward points :10
Condition :New
Availability : In Stock
Cover : Hardcover
Indo Bangla Book
Latest Products
Tags
Details
বিমল দে যদি শুধুমাত্র একজন সাদা চামড়ার লোক হতেন তাহলে ভূ-পর্যটক এবং ভ্রমণলেখক হিসেবে সারা পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে তাঁর নাম উচ্চারিত হতো। এ কথাটা তাকে কয়েক দিন আগে ফোনে বলতেই উনি বরাবরের মত বিনয় হাসি দিয়ে বললেন যে 'আমার জন্ম বরং ইউরোপ আমেরিকায় না হয়ে ভারতবর্ষে হয়েছে এটাই সবদিক থেকে ভালো হয়েছে'। বিপুল ভ্রমণ অভিজ্ঞতার তুলনায় যে উনি খুব বেশি বই লিখেছেন তা নয় কিন্তু প্রতিটা বই আপনাকে অবাক করে দিতে পারে। 'সুদূরের পিয়াসী'র দুই খন্ড আশ্চর্যতম ভ্রমণকাহিনী, এক বাঙ্গালী যে কিনা গ্রীনল্যান্ডে এস্কিমোদের ইগলুতে ৩ মাস থেকে তাদের সাথেই যোগ দিয়েছে মাছ ধরায়, সিল আর সিন্ধুঘোটক শিকারে! ইউরোপের যে জিপসিদের সবাই ভয় করে ও এড়িয়ে চলে, তাদের ডেরায় আস্তানা গেড়ে, তাদের সাথে রাস্তায় ম্যাজিক দেখিয়ে থাকলেন কয়েকমাস। চললেন স্কুনারে চেপে ইষ্টার দ্বীপে, সেই রহস্যময় বিশাল প্রস্তর মূর্তিগুলো দেখলেন প্রাণ ভরে, তারপর গেলেন তাহিতি! এবং লেখক বিমল দে এখনো জীবিত! প্রথম খণ্ড ১৯৬০ সালে প্রকাশিত। সাইকেলে বিশ্ব ঘোরা ভূপর্যটক বিমল দে'র চরম ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম ১৬ বছর বয়সে তাঁর ঘর পালিয়ে ছদ্মবেশে সাধুদের দলে ভিড়ে পায়ে হেঁটে তিব্বতে কৈলাস ও মানস সরোবর ভ্রমণের অবিশ্বাস্য কাহিনী পড়ে। বাঙালির লেখা সেরা তিব্বত অভিযান 'মহা তীর্থের শেষ যাত্রী' এবং পৃথিবীর তিব্বত নিয়ে লেখা শ্রেষ্ঠ বইগুলোর অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও এটার নাম থাকবে। লেখক মাত্র ১৬ বছর বয়সে এক সাধুবাবার ভক্ত হয়ে তাঁর পিছু পিছু পায়ে হেঁটেই সিকিম দিয়ে লাসা চলে যান ছদ্মবেশী মৌনী সাধু হয়ে। পরে একাকী রওনা দেন কৈলাস তীর্থ ও মানস সরোবর এবং রাক্ষস হ্রদ দেখার জন্য। রূপকথাকে হার মানায় তাঁর এই সত্য কাহিনী- “চারদিকে ছোটখাট পাহাড় উপত্যকা, আর বরফ গলে সৃষ্টি হওয়া পাহাড়ি নদী। ঠাণ্ডা বাতাস দিনের বেলা সূর্যের তাপে একটু দূরে গিয়ে অপেক্ষা করে, সন্ধ্যে হলেই সে আবার নেমে আসে। রাতের ঠাণ্ডা এখানে ভয়ংকর। তিব্বত এক অদ্ভুত দেশ। তার দক্ষিণে হিমালয় পর্বতশ্রেণী আর উত্তরে কুয়েন লুন পর্বতশ্রেণী। এই দুই পর্বত প্রাচীরের মাঝে লুকিয়ে আছে এই ভীষণ ঠাণ্ডার দেশ, যার উচ্চতা গড়ে প্রায় তেরো থেকে পনের হাজার ফুট আর তাপমাত্রা ওঠে একশ পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত আর নামে শূন্যের থেকেও পয়তাল্লিশ ডিগ্রি নীচে।" বাংলায় তিব্বত নিয়ে এমন বই আর দু’টি আছে কিনা সেই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তো আছেই, সত্যি কথা হচ্ছে ১৯৫৬ সালে উনার সেই অভিযানের দুর্গম তিব্বতের এমন সব জায়গার এত নিখুঁত ও বিস্তারিত বর্ণনা আছে যে তার জুড়ি বিশ্বেও বিরল। পরে দেখি বইখানা ইংরেজিতেও অনূদিত হয়েছে, একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে সে তিব্বতপ্রেমী পশ্চিমা সমাজে এই বইটা কতখানি সমাদৃত। তিব্বতের ভূপ্রকৃতির সাথে সাথে সেখানের মানুষদের ছবিও তিনি এঁকেছেন নিখুঁত ভাবে-‘পৃথিবীর এই ছাদে প্রকৃতির কোলে এই শিশুদের দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তাদের চোখে দেখছি স্বচ্ছ ও পরিষ্কার জ্যোতি, মুখে সরল ও পবিত্রভাব। এখানকার লোকদের মুখেও সেই পবিত্রভাবটা কেউ গোপন করতে পারবে না। এই নিষ্কলঙ্ক স্বর্গভূমিতে এখনও মনে হয় পাপের হাওয়া লাগেনি। হিমালয়ের এই উঁচু বেড়া ডিঙ্গিয়ে মনে হয় পাপ এখানে প্রবেশ করতে পারে না। জীবনযাত্রা এদের যে রকমই হোক না কেন, পোশাকে এরা যতই ভিখিরি হোক না কেন, এদের মধ্যেই আমি দেখতে পাচ্ছি সত্য-শিব ও সুন্দরের প্রকাশ। এদের মত এত মনখোলা হাসি বোধহয় জগতের আর কোন জাতিই হাসতে পারে না।‘ ৪০০ পাতার প্রমাণ আকারের বই, খুব উপভোগ করলাম। এবং বইটি বার বার ফিরিয়ে নিয়ে আসছিল আমাদের ২০০৯ সালে তিব্বত ভ্রমণের স্মৃতি। কিন্তু কৈলাস আজও অদেখা, মানস সরোবর ছোঁয়া আজও বাকী, এখন নতুন করে উৎসাহ পাচ্ছি আবার ভ্রমণ পরিকল্পনার। বিমল দে বাল্যকাল থেকে সাধু ঘেঁষা ছিলেন, নানা বইতে, সে ভারত হোক বা পেরু, তাঁর স্পিরিচুয়াল যাত্রার একটা ঝোঁক সবসময়ই প্রকাশ পেয়ে যায়। তো কৈলাসের কাছে এক সাক্ষাৎ শিবের মত নাঙ্গা সাধু তাঁর জীবন রক্ষা করে, ও আশ্রয় দেন। পরবর্তীতে লেখক সেই সাধুকে আর দেখেন নি, কিন্তু তাঁর খোঁজে তিব্বতে আবার গিয়েছিলেন ৫০ বছর পরে! অবশেষে প্রথম দেখা হবার ৫৩ বছর পর সেই কৈলাসবাবাকে নিয়ে ফের আবিষ্কার করলেন ভারতে, প্রচ্ছদে যার ছবি আছে, সেই কাহিনী নিয়েই ২০১৫ সালে প্রকাশিত হত ‘মহাতীর্থে কৈলাসবাবার সন্ধানে’। এটি প্রথম বইয়ের মত অত সুখপাঠ্য ও শ্বাসরুদ্ধকর নয়, কিন্তু চীনা দখলদারিত্বের পর তিব্বতের ইতিহাস জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রথম বইটা, যে কোন তিব্বত নিয়ে আগ্রহী, হিমালয়প্রেমী, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীর জন্য অবশ্য অবশ্য পাঠ্য, একেবারে দশে দশ। সত্যি বলতে পৃথিবীর অনেক অতি বিখ্যাত এবং ক্লাসিক্যাল ভ্রমণলেখকদের চেয়ে উনার লেখায় সত্য কাহিনীর রোমাঞ্চ অনেক বেশি। ’আমার পিছনের দুই যাত্রী ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা পরস্পরকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় চোখ বুজে আছে, মনে হয় ভীষণ ক্লান্ত। -- পরে উনাদের নাম জানলাম, ভদ্রলোকের নাম জন লেনন আর তাঁর বান্ধবি ইয়েকো ওনো ( জাপানী)।‘ একটানা পড়ে শেষ করেছিলাম ভূ-পর্যটক বিমল দে’র লেখা ‘পরিব্রাজকের না বলা কাহিনী’। এখানে আছে উনার অসামান্য ডানপিটে বাচ্চাবেলার কথা। আদি ঠাকুরদার বাড়ি ফরিদপুরের মাদারিপুর, উনার জন্ম কলকাতা, বেড়ে উঠেছেন উত্তর চব্বিশ পরগনা। শিশুকালে মেঘালয়ের শিলং এ ছিলেন কিছুদিন মামার বাসায়, সেই অভিজ্ঞতায় মূলত শিশুমনে রোপণ করে দেয় দু’চোখ মেলে দেখার স্বপ্ন। আর আগে ল্যাতিন আমেরিকা ও জাপান ভ্রমণ নিয়ে উনার লেখা ‘সূর্য্য প্রণাম’ পড়া হয়েছিল এবং আত্মজীবনীমূলক ভ্রমণকাহিনী ‘সুদূরের পিয়াসী’র কিছু কিছু অংশ। তাঁর ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চারের নেশা অনবদ্য, সাহস অকল্পনীয়, কিন্তু ওই লেখাগুলো ভালো, কিন্তু অতি ভালো নেশা ধরানো মনে হয় নি। তার উপরে কিছুটা অতীন্দ্রিয় স্পিরিচুয়াল ব্যাপারে অতি আগ্রহী হওয়াই তিনি মাঝে মাঝেই ভ্রমণের মাঝে ওদিকে চলে যান কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে। লেখার ভাষা অপূর্ব প্রাঞ্জল, একেবারে পাহাড়ি নদীর মত খরস্রোতা,তরতর করে বয়ে চলেছে এক বাউন্ডুলে স্কুল পালানো কিশোরের জীবন নিয়ে – যে শশ্মানে ঘুরে বেড়ায় সন্ন্যাসী মায়ের আকর্ষণে, মরা পোড়ানো ডোমের ছাপড়ায় থাকে ঘোরার নেশায়, যে কাউকে না বলে দার্জিলিং চলে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার নেশায়, পকেটে কয় পয়সা নিয়েই নিয়মিত বাড়ি পালান, পথে চায়ের দোকানে কাজ করে, বাথরুম পরিষ্কার করে পথের রাহা খরচ পেয়ে যান কিছুটা! এভাবেই হিমালয়ে গুহার নাগা সন্ন্যাসীদের সাথে একেবারে উলঙ্গ অবস্থায় শরীরে ছাই মেখে বানরদের নিয়ে রাত কাটান, আবার মহর্ষি যোগীর আশ্রম দ্য বিটলসের গাইড হিসেবে কাজ করেছেন! এই ফাঁকে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মৌনী সাধু হিসেবে ঘুরে এসেছেন তিব্বতের মানস সরোবর ও কৈলাস। এবার ভাবেই বিশ্ব ভ্রমণে বের হবেন এবং তা হবেন সাইকেলে চেপে! প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করে আশীর্বাদ নিয়ে সাইকেলে চলে যান দিল্লী, কিন্তু পাকিস্তান আর রাশিয়ার ভিসা না মেলায় সেখান থেকে বোম্বাই চেলে এসে পাড়ি জমান ইরানের দিকে। মাত্র ১৬৪ পাতার বই। এর আগে বিমল দে বেশ কিছু বই লিখেছেন, ৮০ বছরের ভদ্রলোক আরো লিখবেন আশা করি। কিন্তু এই বইটির মূল আকর্ষণ এক কিশোরের মধ্যে ভ্রমণপিপাসা জাগ্রত হয়ে কিভাবে, এবং তা জীবনের নিয়ন্ত্রক হয়ে কত অসাধারণ সব কাহিনীর জন্ম দেয়, তার তরতর বর্ণনা। যে কোন ভ্রমণপিপাসুর এবং জীবন নিয়ে আগ্রহীদের বইটি পড়া উচিত। প্রেমাংকুর আতর্থীর ‘মহাস্থবির জাতক’এর মতই বিমল দে’র এই জীবনকাহিনী ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পাবে, সেই আশা রাখি। ভূ-পর্যটক কিংবদন্তি বিমল দে'র সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়েছিল ২০২২ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য আস্তানায়। উনি নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দুই তিন দিন একসঙ্গে থেকে নানা বিষয়ে গল্প করার। ৮২ বছরের মানুষটির কন্ঠ ভরা উচ্ছ্বাস এবং তারুণ্য থেকে কোন সময় মনে হয় না তার বয়স ২০ এর বেশি। এই কীর্তিমানের সামনে যাবার আগে তার প্রকাশিত প্রতিটা বই আবার খুঁটিয়ে পড়ে নোট নিয়ে যে বিশাল সব সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। বিমল দে'র যেকোনো একটি ভ্রমণ কাহিনী আমাদের জীবন পাল্টে রোমাঞ্চকর সুন্দরে ভরিয়ে দিতে পারে। " এই বিচিত্র জগতে দেখার শেষ নেই। দীর্ঘ ৬৫ বছর যাবৎ ঘুরছি আর দেখছি,সমুদ্র, সাগর, নদী, পাহাড়, সমতল,জঙ্গল, মরুভূমি সবকিছু মিলিয়ে এই জগৎটা তার বহুরূপী বেশে দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন সমাজ, রীতিনীতি, জন্তু-জানোয়ার আর রংবেরঙের মানুষেরা যেন লুকোচুরি খেলছে এই বিরাট জগত মঞ্চে। যতই দেখছি ততই মনে হচ্ছে আরো দেখি। ভ্রমন আমার তপস্যা, পথ আমার তপোভূমি। তপস্যা শেষে নয়, তপস্যার সাথে সাথেই ফল পাওয়া যায়, ভ্রমণ-তপস্যার এটাই মূল কথা। মনের মধ্যে যখন "চলার শেষ কোথায়" প্রশ্নটা বারবার এসে ধাক্কা দিচ্ছিল, চলার নেশায় যখন আমার প্রশ্নটাকে কিছুতেই আমল দিতে চাই়নি, তখন এই আন্দেস ভ্রমণ আমাকে পৌঁছে দিল ভ্রমণ-তপস্যার শেষ ধাপে। সেখানে পৌঁছে মনের অবস্থার এক অদ্ভুত পরিবর্তন এলো যাকে আমি বলব পরিপূর্ণতা। যে রকম অভিজ্ঞতা এলে মনে হয় জীবন হ'ল ধন্য। আমার তো আর কিছু পাওয়ার নেই। এমন অভিজ্ঞতা যে জগতে ছিল সেটাও আমার জানা ছিল না। এটাই আমার তপস্যালব্ধ অভিজ্ঞতা।" -ভূপর্যটক বিমল দে (ছবিতে তরুণ বিমল দে, এখনো চিরতরুণ বয়স মাত্র ৮৫।) লেখা কৃতজ্ঞতা - তারেক অণু _______________________________
From the Publisher





