Details

“ যতদূর মনে হয় নিজের উপন্যাস সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসুর অনুভূতিটা ছিল মিশ্র । অতি অল্প বয়স থেকে গল্প উপন্যাস লিখছেন তিনি , কিন্তু সারা জীবন মনে মনে জেনে এসেছেন আদতে তিনি কবি , উপন্যাস লেখা নেহাতই অর্থের প্রয়ােজন , প্রকাশক - সম্পাদকের তাগাদায় , বা , একেবারে গােড়ার দিকে ঢাকার ‘ প্রগতি ' পর্বে নিজের কাগজের জায়গা ভরাট করতে । এই প্রায়োজনিক দিকটা উপন্যাসের সঙ্গে তার সম্পর্ককে যেন ব্যবহারিক স্তরে আটকে রাখল , তৈরি হতে দিল না নিভৃত প্রেমের সম্পর্ক । পবিত্র এবং ব্যক্তিগত যা - কিছু তা শুধুই কবিতা বা কবিতার সঙ্গে জড়িত । আঠেরো বছর বয়সে যখন ‘রজনী হ’লো উতলা ’ লিখেছিলেন তখন মনে ছিল তারুণ্যের উত্তেজনা , নতুন যুগের সমিধসংগ্রহে ইন্ধন যোগাতে উৎসুক তখন তাঁর লেখনী । আমার ছেলেবেলা - তে বুদ্ধদেব জানাচ্ছেন , “ সেটা ( রজনী হ ’লো উতলা ) অচিন্ত্যকুমারের হাতে দিয়ে আমি বলেছিলাম বস্তুটা একটু মুর্বিড ’ , অচিন্ত্যকুমার হেসে বলেছিলেন , “ আমরা মর্বিড লেখাই পছন্দ করি । বাজারে তখন মর্বিড কথাটা নতুন উঠেছে । ” হালকা করে ভাসিয়ে দেওয়া বাজারে ’ শব্দটা সেই সময় এবং তরুণ লেখক সম্পর্কে পরিণত বয়সের সকৌতুক দৃষ্টিভঙ্গি । সেই সঙ্গে এ - ও লক্ষ্য করার যে এই সাহসী গল্পটিকে নয় , কয়েকমাস পরে লেখা ‘বন্দীর বন্দনী ’ কেই বুদ্ধদেব তাঁর প্রথম সাবালক লেখা হিসেবে সনাক্ত করছেন । এর প্রায় গায়ে গায়ে নিজেদের পত্রিকা প্রগতি ’ বেরোতে শুরু করলে ‘ মাসিকপত্রের পক্ষে অপরিহার্য ধারাবাহিক উপন্যাসটি তিনিই লিখতে শুরু করেন । অবশ্য সেটি ছিল আরও তিনজনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে লেখা , চৌরঙ্গী । এরপর ‘সাড়া’। শুরুটা ‘ প্রগতি ’ তে ধারাবাহিক ভাবে হলেও শেষ হয়নি , পরে বই হয়ে বেরোয় ১৯৩০ সালে । সদ্য কুড়ি পেরোনো তরুণের লেখা এই উপন্যাস নিয়ে শোরগোল হয়েছিল প্রচুর , যার পুরোধা অবশ্যই বাংলাসাহিত্যের স্বনিযুক্ত চৌকিদার শনিবারের চিঠি ' , যারা রজনী হ 'লো উতলা ’ কে নিয়েও উতরালে হয়েছিল সমালোচনায় । বুদ্ধদেব বসুর জীবৎকালেই ‘সাড়া’র অনেকগুলি সংস্করণ হয় , তাতে লেখক অনেক বর্জন , পরিমার্জনও করেন । ১৯৫৯ - এর নতুন সংস্করণে একটি ভূমিকা যোগ করেন বুদ্ধদেব এবং সেখানেও কিছুটা কৌতুকে , নিজের কাঁচা বয়সটার প্রতি প্রশ্রয়ে এবং কিছুটা তৎকালীন সমালোচকদের প্রতি প্রচ্ছন্ন ব্যাঙ্গে তিনি লেখেন — “ আজকের দিনের পাঠকেরা শুনে নিশ্চয়ই বিস্মিত হলেন যে প্রথম প্রকাশকালে ‘ সাড়া ’ চিহ্নিত হয়েছিল অশ্লীলতার দুঃসহ নিদর্শনরূপে । কেউ এতে ঈডিপাস এষণা আবিষ্কার করেছিলেন , কেউ বা অজাচার। …” তবে প্রকৃতপক্ষে সাড়াই বুদ্ধদেবের প্রথম উপন্যাস এবং এটিই তাকে এগিয়ে দিয়েছিল পেশাদার লেখক হওয়ার দিকে । তাঁর উপন্যাস নিয়ে অশ্লীলতার অভিযোগেরও এই শুরু , যা তাঁর সঙ্গ ছাড়েনি , এমনকি দু দু ’ বার আদালত পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিল । …”