Free Delivery on all orders over 1990

কলিকাতার কালকথা

Tk. 680Tk.800You Save TK. 120 (15%)

Book Length

lengh

304

Edition

edittion

1st Published

ISBN

isbn

0000000000

অনেক কাল আগের কথা। তখন বঙ্গদেশে ইংরেজদের রাজত্ব শুরু হয়েছে। তখন বঙ্গদেশে, শোভাবাজার রাজবংশের স্থাপয়িতা নবকৃষ্ণ বাহাদুরের অমিত প্রভাব। তখনকার কলকাতা আর...

Reward points :10

Condition :New

Availability : In Stock

Cover : Hardcover

1

Latest Products

Categories

Delivery
Inside Dhaka metro: 1 to 3 days
Outside Dhaka ( courier): 2 to 5 days
Cash On Delivery available only in Dhaka metro

Details

অনেক কাল আগের কথা। তখন বঙ্গদেশে ইংরেজদের রাজত্ব শুরু হয়েছে। তখন বঙ্গদেশে, শোভাবাজার রাজবংশের স্থাপয়িতা নবকৃষ্ণ বাহাদুরের অমিত প্রভাব। তখনকার কলকাতা আর এখনকার কলকাতায় আকাশ-পাতাল প্রভেদ। তখন কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে শোভাবাজার রাজবংশ ছাড়া আরও দুই ঘর বড় মানুষের বাস ছিল - এক ঘর 'নস্কর', আরেক ঘর 'দত্ত'। চূড়ামণি দত্ত ছিলেন ছিলেন দত্ত বংশের সন্তান। কালীপ্রসাদ দত্ত বলে একটি রাস্তা এখনও কলকাতায় বিদ্যমান, এই কালীপ্রসাদ দত্ত ছিলেন চূড়ামণি দত্তের ভ্রাতুষ্পুত্র। চূড়ামণি দত্ত সেকালের কলকাতার খুব বড় কারবারি লোক ছিলেন। কলকাতার ডালহৌসি অঞ্চলে তাঁর প্রকান্ড অফিস ছিল। প্রচুর লোক তাঁর দপ্তরে কাজ করতেন। তিনি নিজে মোটামুটি লেখাপড়া জানতেন, কিন্তু তাঁর বিষয়বুদ্ধি ছিল খুব ভালো। বছরে অনায়াসে ব্যবসা থেকে তিনি লক্ষাধিক টাকা রোজগার করতেন। তাঁর প্রকান্ড বাড়ি ছিল, বড় মানুষের ন্যায় তিনি বাস করতেন। চাকর-বাকর, দেওয়ান, আমলা তাঁর অনেক ছিল। যেমন তিনি দুই হাতে রোজগার করতেন, তেমনই পালা-পার্বণে খোলা হৃদয়ে দুই হাতে দান ধ্যানও করতেন। তবে তাঁর একটি মহৎ দোষও ছিল। সেটা আর কিছুই নয়, তিনি অত্যন্ত রূঢ়ভাষী ছিলেন। যাঁকে মুখে যা আসত, তিনি তাই বলে গাল দিতেন; আর ছোট-বড়-ব্রাহ্মণ-কায়স্থ নির্বিশেষে সকলকেই তিনি, 'শালা' বলে সম্বোধন করতেন। তবে এটা ছিল তাঁর বাইরের ব্যবহার, মনের মধ্যে তাঁর রূপ ছিল একেবারে আলাদা। পরের উপকার করার জন্য তিনি একেবারে মুক্তহস্ত ছিলেন, তাঁর কাছে কেউ সাহায্য চেয়ে বিফল হয়ে ফিরতেন না। তবে সকলকেই প্রথমে তাঁর বাক্য-বাণ সইতে হত। তাঁর মুখ থেকে মধুর 'শ্যালক' সম্বোধন হজম করে নিলেই আর চিন্তা থাকত না। লোকে সেই কথা জানত, তাই তাঁর গালি খেয়েও কেউ রাগ করত না, হাসিমুখে সেটা সকলে হজম করত। এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এক রবিবারে এক কন্যাদায়গ্রস্ত ব্রাহ্মণ চূড়ামণি দত্তের কাছে সাহায্যের জন্য উপস্থিত হলেন। তাঁকে দেখেই দত্ত মহাশয় বললেন, 'ওরে শালা কি জন্য এসেছিস? কিছু চাই বুঝি?' ব্রাহ্মণ বললেন, 'আজ্ঞে কন্যাদায় তাই কিছু সাহায্য প্রার্থনা করতে এসেছি'। দত্ত মহাশয় একথা শুনে রেগে উঠে বললেন, 'ওরে শালা বিয়ে করার সময় কি চূড়ো দত্ত কে জিজ্ঞেস করেছিলি? মেয়ে জন্মাবার সময় পরামর্শ নিয়েছিলি? এখন বিয়ে দেবার সময় এসেছিস বে শালা চূড়ো দত্তের কাছে?' এই বলেই তিনি তাঁর খাস ভৃত্য রামচরণ কে হাঁক পাড়লেন। রামচরণ এলে তাঁকে তিনি বললেন, 'দেখ শালা রামা এই বামুনটাকে নিয়ে যা। ভালো করে ঘি-ভাত খাওয়ানোর আয়োজন করে দে'। তারপরে ব্রাহ্মণের দিকে চেয়ে বললেন, 'যা শালা, দু'টো খেয়ে তো নে। তারপরে দেখা যাবে মেয়ের বিয়ে'। ব্রাহ্মণ ষোড়শোপচারে আহার শেষ করে অপরাহ্নে দত্ত মহাশয়ের কাছে উপস্থিত হলে, দত্ত মহাশয় তাঁকে বললেন, 'বল শালা, তোর মেয়ের বিয়েতে কত টাকা লাগবে?' ব্রাহ্মণ ভয়ে ভয়ে অতি অল্প কিছু চাইলেন। তাঁকে অবাক করে চূড়ামণি দত্ত বললেন, 'ওরে শালা! ওই টাকায় কি মেয়ের বিয়ে হয় রে! এই নিয়ে যা তিনশো টাকা।' এই বলে তিনশো টাকা দিয়ে ব্রাহ্মণ কে বিদায় করে দিলেন। সেই সময়ের তিনশো টাকা এখনকার দিনে যেমন করে হোক হাজার ত্রিশেক টাকার সমান। এইরকম দান চূড়ামণি দত্ত কত করেছেন তার হিসাব নেই। দোষ খালি একটাই, ওই 'শ্যালক' সম্বোধন আর রূঢ়বাক্য। তখন কলকাতা শহরে মোটরের নাম কেউ জানত না। ঘোড়ার গাড়ির প্রচলনও খুব কমই ছিল। তখন বড় মানুষেরা পাল্কি চড়ে যাতায়াত করতেন। আর সেসব পাল্কির বাহারও ছিল খুব। বড় মানুষদের বড় বড় পাল্কি, রুপো দিয়ে বাঁধানো ডান্ডা, মকর-হাঙ্গর-মুখো সাজ। আট জন বা বারো জন বা ষোল জন বেহারা না হলে সেই পাল্কি বইবার যো ছিল না। চূড়ামণি দত্ত পাল্কি করেই অফিসে যাতায়াত করতেন। একদিন তিনি পাল্কি চড়ে যথাসময়ে অফিসে গিয়েছেন। তখনও ফাউন্টেন পেন ও স্টিল পেনের যুগ আসে নি। সকলে লেখার জন্য খাগের কলম ব্যবহার করতেন। তখন খাগের কলম কাটতে হত, অর্থাৎ এখন যেমন আমরা পেন্সিল কাটার দিয়ে পেন্সিল ছুলে নি, তখন খাগের কলম কে লেখার উপযোগী করার জন্য কেটে নিতে হত। অনেকেই এই কলম কাটায় পারদর্শী ছিলেন। সকল অফিসে দুই-চারজন ওস্তাদ কলম কাটিয়ে ছিল। চূড়ামণি দত্ত নিজেও খুব ভালো কলম কাটতে পারতেন। সেদিন অফিসে পৌঁছে নির্দিষ্ট আসনে বসে তিনি কলম কাটতে শুরু করলেন। এমন সময় তাঁর অসাবধানতাবশত ছুরিতে তাঁর আঙ্গুল একটু কেটে গেল আর সামান্য রক্তপাত হল। অমনি চূড়ামণি দত্ত তাঁর আসন থেকে উঠে চেঁচিয়ে বললেন, 'ওরে শালারা শিগগিরি বেহারাদের ডেকে দে, আমাকে এখনই বাড়ি যেতে হবে। চূড়ো দত্তের শরীর থেকে এই প্রথম রক্তপাত হল! তবে তো আর সময় নেই।' এই বলেই তিনি পাল্কিতে উঠে বাড়িতে ফিরে এলেন। বাড়ি ফিরেই তিনি শোরগোল বাঁধিয়ে দিলেন। প্রথমেই চাকরদের ডেকে বললেন, 'দেখ তো অন্দরে মাগীদের খাওয়া হয়েছে নাকি; না হয়ে থাকে তো তোরা এখনই খেয়ে নে, কেউ দেরি করিস নে। আর সেই দেওয়ান শালা কে ডেকে দে'। সংবাদ পাওয়া মাত্র দেওয়ান এসে হাজির হলেন। তাঁর ওপরে হুকুম হলো, 'শালা এখনই লোক পাঠিয়ে একশো জন ঢাকওয়ালা নিয়ে আয়। চারটের মধ্যে একশো জন ঢাকি চাই।' দেওয়ানের সাধ্য ছিল না যে তিনি কিছু জিজ্ঞেস করেন। তিনি লোক পাঠিয়ে দিলেন একশো জন ঢাকি জোগাড় করার জন্য। তখন শহরে ঢাক-ঢোল খুব মিলত। এদিকে দত্ত মহাশয় অফিসের কাগজপত্র আর নিজের হিসাবপত্র নিয়ে বসলেন। চারটের সময় দেওয়ান এসে সংবাদ দিলেন যে একশো ঢাকি হাজির। দত্ত মহাশয় তখন বললেন, 'ওই খাটখানা উঠানে নিয়ে যা, আর তাতে বেশ ভালো করে বিছানা পাত।' হুকুম তামিল হল। তিনি তখন উঠে একখানা গরদের কাপড় পড়লেন আর একখানা নামাবলী মাথায় বাঁধলেন। তারপরে বাড়ির মেয়েদের ডেকে বললেন, 'শালীরা, কাঁদিস নে, আমি যম জিনতে যাচ্ছি।' দত্ত মহাশয়ের নিজের কোনও সন্তান ছিল না। তারপরে উঠানে এসে দেওয়ান কে বললেন, 'ওরে শালা, আমার গায়ে মাথায় ঐ দুর্গা, কালী, রাম, হরি বেটাবেটীদের নাম লিখে দে।' সেই হুকুমও দ্রুত তামিল হল। তলব করা একশো ঢাকি তখন তাঁর বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের দিকে ফিরে চূড়ো দত্ত বললেন, 'দেখ শালারা, তোরা যে বিসর্জনের বাজনা বাজিয়ে থাকিস তা বাজাতে পারবি নে। আমি নতুন বোল শিখিয়ে দিচ্ছি। এই বোলের সাথে তাল দিয়ে বাজাবি। এই শোন।' বলে অঙ্গভঙ্গি করে বোল দিলেন, "দুনিয়া জিনিয়া চূড়া যম জিনিতে যায়, তোরা দেখবি যদি আয়। যম জিনিতে যায় রে চূড়া যম জিনিতে যায়।" তাঁর তালের সাথে তাল দিয়ে একশো ঢাক বেজে উঠলো, 'যম জিনিতে যায় রে চূড়া, যম জিনিতে যায়'। দত্ত মহাশয় তখন সেই খাটের ওপরে উঠে বসে বললেন, 'তোল শালারা খাট। নিয়ে চল গঙ্গায়।' তাই হল। একশো ঢাকের বাদ্যি আর সেই নতুন বোল শুনে পাড়া কেঁপে উঠলো। কি ব্যাপার সেটা দেখার জন্য সবাই পথে ভিড় করলো। দেখলো এক আশ্চর্য দৃশ্য! খাটের ওপরে দেব-দেবী নামাঙ্কিত দেহ আর মাথায় নামাবলী বেঁধে চূড়ামণি দত্ত বসে আছেন আর হাততালি দিয়ে গাইছেন, 'যম জিনিতে যায় রে চূড়া, যম জিনিতে যায়'। এই শোভাযাত্রা যখন মহারাজা নবকৃষ্ণ বাহাদুরের বাড়ির সম্মুখে উপস্থিত হল, তখন বেলা প্রায় সায়াহ্নে গড়িয়েছে। সেখানে দত্ত মহাশয়ের নির্দেশে একশো ঢাকি তান্ডব নৃত্য সহযোগে চিৎকার করে গাইতে লাগলো, 'দুনিয়া জিনিয়া চূড়া যম জিনিতে যায়, তোরা দেখবি যদি আয়।' আর একশো ঢাক ওই বোলে বাজতে লাগলো। মহারাজ বাহাদুর তখন ছাদের উপর বেড়াচ্ছিলেন। এত ঢাকের বাদ্যি আর কোলাহল শুনে তিনি ছাদের পাশের রাস্তার দিকে এসে দাঁড়ালেন। মহারাজ কে দেখতে পেয়ে দত্ত মহাশয় বলেন, 'রাজা, চূড়ো যম জিনতে যাচ্ছে, সঙ্গে যাবে তো এসো।' মহারাজ জানতেন যে চূড়ামণি দত্তের মাথার একটু গোল আছে। কিন্তু এই ব্যাপার দেখে তিনি বুঝলেন যে দত্ত একেবারেই ক্ষেপে গেছে। তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে একটু হেসে ছাদের অপর দিকে চলে গেলেন। এই শোভাযাত্রা যখন গঙ্গার ঘাটে গিয়ে পৌঁছালো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। গঙ্গাতীর তখন লোকে লোকারণ্য। দত্ত মহাশয় আদেশ করলেন যে তাঁকে খাট সমেত জলে নামানো হোক। আদেশ পালন হল। তাঁকে খাট সমেত গঙ্গা জলে নাভি পর্যন্ত ডুবিয়ে সকলে ধ্বনি দিতে লাগলো, 'গঙ্গা নারায়ণ ব্রহ্ম'। চূড়ো দত্ত তখন মাথার নামাবলী ফেলে দিয়ে দুই অঞ্জলি গঙ্গাজল মাথায় দিয়ে বললেন, 'এস যম, তোমার আজ পরাজয়!' তারপরই তাঁর চক্ষু স্থির হয়ে গেলো, হৃদ স্পন্দন থেমে গেলো। যম-বিজয়ী চূড়ামণি দত্তের পার্থিব খেলা শেষ হয়ে গেলো। সকলে জয়ধ্বনি করে উঠলো, 'জয় যম-বিজয়ী চূড়ামণি দত্তের জয়!' সেই থেকে বিসর্জনের বাজনা ঢাকে নতুন ভাবে হল। বর্তমানে পূজায় এই তালেই বিসর্জনের বাজনা বাজে। যমজয়ী চূড়ামণি দত্ত হলেন এর সৃষ্টিকর্তা। এরকমই কলকাতার বা কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া বহু অজানা কাহিনীতে সমৃদ্ধ হয়েছে রানা চক্রবর্তী রচিত—“কলিকাতার কালকথা”

Title :কলিকাতার কালকথা

Author :রানা চক্রবর্তী

Publisher :Lalmati || লালমাটি

Language : Bangla

hardcover : 304 pages

Condition : New

Book Printed Origin : india

Readling Level : Teen and Young adult

Related Products

Author Books

Previous
Next

Loading

Loading